সমকামিতায় অভিযুক্ত শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ফের উত্তাল ইবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও সমকামিতায় বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হাফিজুল ইসলামকে স্থায়ী বহিষ্কাররের দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১৬ মে) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবনে সিনা ভবনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, প্রক্টর আর ছাত্র উপদেষ্টা অবরুদ্ধ হন।আন্দোলন শুরুর পর ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান ভবন থেকে বের হয়ে যান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
এর আগে সকাল ১০ টা থেকে রবীন্দ্র-নজরুল ভবনের গগন হরকরা মিলনায়তনে ২ঘন্টা ব্যাপী ওই শিক্ষকের অভিযোগ ও শাস্তি পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আশরাফুর রহমানের সাথে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ জুম্মা ফের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখান করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে তদন্ত কমিটির কছে ভুক্তভোগীর জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্তে হফিজের অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। কিন্তু এর পরেও তাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করে আবারো তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। আমাদের সাথে ২ঘন্টা মতবিনিময় সভা করেছে এই তদন্ত কমিটি। কিন্তু তদের কথায় আমাদের মনে হয়েছে এই কমিটি বায়স্ট। আমরা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। পূর্বের তদন্ত কমিটির কাছে ইতোমধ্যেই আমরা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ উত্থাপন করেছি, সেগুলোর ভিত্তিতে তদন্ত কাজ করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হাফিজের ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তারা চাইলেই তদন্ত কমিটি থেকে তথ্য নিতে পারেন। পূর্বের তদন্তে যেহেতু অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে, সেই ভিত্তিতে হফিজকে স্থায়ী বরখাস্ত করতে হবে।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বোরহান কবির বলেন, ‘সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু তাকে বাধ্যতামুলক ছুটি দিয়ে লঘু শাস্তি দিয়ে দায়মুক্তি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আশরাফুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি সাব-জুডিস অবস্থায় আছে সেহেতু কোনো মন্তব্য করবো না।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, কথা না শুনলে মার্ক কম দেওয়া ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামীতায় বাধ্য করা সহ নানা অভিযোগ ওঠে। পরে তার অপসারণের দাবিতে প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্যের কাছে তারা লিখিতভাবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৬তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বার্ষিক একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা হাফিজের এই শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাফিজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানায়। দাবি আদায়ে গত ২৮ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করলে প্রশাসন শাস্তি পর্যালোচনার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। এরই প্রেক্ষিতে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে শাস্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
আপনার মতামত লিখুন