সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র: গ্রেপ্তার ২২, মেজর পদমর্যাদার একজন হেফাজতে

বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৩১ জুলাই, ২০২৫, ৫:৩৯
সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র: গ্রেপ্তার ২২, মেজর পদমর্যাদার একজন হেফাজতে

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ আয়োজনের অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ওই বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় একজন মেজর পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার সেনা সদরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়। ঘটনার পর ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৮ জুলাই কে বি কনভেনশন সেন্টারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে ৩০০ থেকে ৪০০ জনের সমাবেশ ঘটে। সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে রাজধানী দখল ও অস্থিরতা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়।

মামলার তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত ২২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাঁরা কারাগারে আছেন।

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। তাঁরা ‘প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘প্রজন্ম ৭১’ এবং ‘শেখ হাসিনা’সহ বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের দাবিতে গোপন বৈঠক ও নাশকতার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানার একটি বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং একই এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তা সাদিকুল হককে হেফাজতে নেওয়া হয়।

সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত, তদন্ত চলমান। প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা জানান, সেনাবাহিনীর হেফাজতেই আছেন তিনি।

তদন্তে জানা গেছে, মেজর সাদিকের নির্দেশে বসুন্ধরা এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। সেন্টারটির ব্যবস্থাপক মুজাহিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি পরিকল্পিতভাবে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বন্ধ রেখেছিলেন।

তদন্তে আরও জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত চারটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হয়েছে, যেগুলোর ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করা হয়েছে। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভূমিকা যাচাই করা হচ্ছে।

প্রয়োজন অনুযায়ী রিমান্ডে এনে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই ষড়যন্ত্রে জড়িতদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান চলছে।