স্টারমার-ইউনূস বৈঠক হচ্ছে না, ব্যর্থ কূটনৈতিক চেষ্টা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আলোচিত বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত আর হচ্ছে না। সরকারি সূত্র জানায়, লন্ডনে ইউনূসের সফরের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর থেকেই এই বৈঠক বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিল। ব্রিটিশ পক্ষও বৈঠকটি বৃহস্পতিবার কিংবা শুক্রবার হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এই বৈঠকটি বাতিল হয়ে গেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধানে লন্ডন সফরে যাওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকাস্থ এক ইংরেজি দৈনিকের অনুসন্ধানে জানতে চাওয়া হলে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কূটনীতিক জানান, “বৈঠকটি চূড়ান্ত হয়েছিল এমন কোনো অবস্থান কখনোই ছিল না।” আরেক কূটনীতিকের ভাষায়, “ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইউনূস কিংবা বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে অনিচ্ছুক—এমনটা নয়, বরং তিনি বর্তমানে ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ মুহূর্তে বৈঠকে রাজি হননি।”
চারদিনের সফরে মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। সফরের মূল উপলক্ষ, রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ গ্রহণ। বৃহস্পতিবার লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
কিয়ার স্টারমার সম্প্রতি লেবার পার্টির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। একই দল থেকে নির্বাচিত এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী, যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি এবং শেখ রেহানার কন্যা।
শেখ পরিবারভুক্ত এই তিন সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বিশেষ করে, টিউলিপের বিরুদ্ধে লন্ডনে পাচারের অর্থে বাড়ি কেনার অভিযোগ ওঠার পর তিনি স্টারমারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বাংলাদেশ সরকারের দাবি, শেখ হাসিনা ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে পাচার হওয়া বিপুল সম্পদের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে। কাতারভিত্তিক আল-জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসারে, ব্রিটিশ সরকার ইতিমধ্যে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদ জব্দ করেছে। আল-জাজিরা দাবি করেছে, যুক্তরাজ্যে তাঁর মালিকানায় রয়েছে অন্তত ৩৫০টি বাড়ি।
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা এর আগে জানায়, ইউনূসের সফরের সময় তাঁর রাজা চার্লস ও কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক নির্ধারিত ছিল। এমনকি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করে টিউলিপ সিদ্দিকী বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে তাঁর কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠান। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, টিউলিপের এই ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না।
মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একটি বৈঠক। এরপর ওই দিনই তিনি দেশে ফিরবেন।
আপনার মতামত লিখুন