যা ইচ্ছা কর, অটোপাস দেব না: ফেসবুকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা:
প্রকাশ: ২১ মে, ২০২৫, ৮:১৭
যা ইচ্ছা কর, অটোপাস দেব না:  ফেসবুকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহর ওপর শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২১ মে) দুপুরে গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এ হামলা চালায় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হামলার পর উপাচার্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,  কোনো অবস্থাতেই অটোপাস দেওয়া হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্নাতক (পাস) ২০২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর থেকে ফল প্রত্যাহার করে অটোপাস দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছিল। বুধবার উপাচার্য যখন ক্যাম্পাসে আসেন, তখন কিছু শিক্ষার্থী তাকে ঘিরে ধরে এবং ভিড়ের মধ্যে থেকে কিছু ‘ছাত্র নামধারী দুষ্কৃতকারী’ পায়ের ওপর হামলা চালায়। এতে উপাচার্য আহত হন।

রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে অধ্যাপক আমানুল্লাহ লেখেন,

   তোমরা হামলা করেছ, আমাকে আহত করেছ, আরও যা ইচ্ছা করো, করো। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা কোনোভাবেই সফল হতে দেব না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অবস্থাতেই অটোপাস দেবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কোনো অবাস্তব দাবি মেনে নিতে পারি না। শিক্ষার মান ও নৈতিক অবস্থান প্রশ্নে আমরা অনড়।

শিক্ষার্থীদের দাবি, করোনাকালীন শিক্ষা বিঘ্ন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরবচ্ছিন্ন ক্লাস না হওয়ায় তারা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেননি। তাদের অনেকেই অকৃতকার্য হওয়ায় পরীক্ষা বাতিল করে ‘অটোপাস’ প্রদানের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন।

তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই দাবির পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। বরং তারা ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘গ্রেস মার্ক’ দিয়েছে এবং ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের সুযোগও রেখেছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ব্যাচে ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে, যা গড়পড়তা তুলনায় অনেক ভালো।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ বিভিন্ন মহলের উসকানিতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে এবং এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও সংবাদ ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে উপাচার্য হামলার বিষয়ে জনগণকে অবহিত করেন এবং নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

উপাচার্যের ওপর হামলার ঘটনায় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। প্রশাসন জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ হাজার ২৫৭টি কলেজ ও ইনস্টিটিউটে প্রায় ৩৪ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বিশাল এই কাঠামোর মধ্যে নীতিগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রশাসন ‘অটোপাস’ বিষয়ে কোনো আপস করতে নারাজ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। উপাচার্যের ভাষায়, ‘আমরা চোখের সামনে একটি জাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস হতে দেব না।’

অটোপাসের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ওপর হামলা