নার্সিং পেশা: সম্ভাবনা বাড়লেও আছে রাষ্ট্রীয় অবহেলায়

দেশে ও বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে নার্সিং পেশার চাহিদা বাড়লেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতি-নির্ধারকদের পর্যাপ্ত দৃষ্টি না থাকায় পেশাটির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটছে না। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত, মানসম্পন্ন শিক্ষক সংকট, অর্গানোগ্রামে পর্যাপ্ত পদ না থাকা, নিয়মিত নিয়োগ ও পদোন্নতির অভাবসহ নানা কারণে দেশের নার্সরা পেশাগতভাবে অসন্তুষ্ট। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে রোগীর সেবার মানে।
আজ ১২ মে, আধুনিক নার্সিংয়ের পথিকৃৎ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস-২০২৫’। এ বছর ‘আমাদের নার্সরা, আমাদের ভবিষ্যৎ—নার্সদের প্রতি যত্ন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি উদযাপন করছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (আইসিএন)’। এ উপলক্ষে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন নার্সিং কলেজ, হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
এমন দিনে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৯২ শতাংশ নার্স কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ‘সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এসএনএসআর)’ পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, অধিকাংশ নার্স কম বেতনে অতিরিক্ত কাজের চাপে রয়েছেন। প্রায় ৯৬ শতাংশ নার্স বেতনের তুলনায় অস্বাভাবিক কর্মচাপে কাজ করছেন। ফলে স্বাস্থ্যসেবার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এসএনএসআরের মহাসচিব সাব্বির মাহমুদ তিহান জানান, একজন চিকিৎসকের সঙ্গে প্রয়োজন তিনজন নিবন্ধিত নার্স। সে অনুযায়ী দেশে ১ লাখ ৩৪ হাজার চিকিৎসকের বিপরীতে নার্স প্রয়োজন ৪ লাখ ২ হাজার। অথচ নিবন্ধিত নার্স আছেন মাত্র ১ লাখ ১০ হাজার। অর্থাৎ দেশে নার্সের ঘাটতি প্রায় ২ লাখ ৯২ হাজার। এই ঘাটতি রোগীর সেবার মানে বড় সংকট তৈরি করছে। এছাড়া দেশের নার্সদের বেতন উন্নত বিশ্বের তুলনায় ৭০-৮০ শতাংশ কম, যা পেশাদারদের মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
নার্সদের পদোন্নতি ও নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। অনেক নার্স চাকরিতে যে পদে প্রবেশ করেন, সেই পদেই অবসরে যাচ্ছেন। নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলো চলছে মূলত সিনিয়র স্টাফ নার্সদের মাধ্যমে। প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, অধ্যাপক পদে প্রয়োজনীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি নেই। গত বছর কিছু সংখ্যক নার্সকে নবম গ্রেডে প্রভাষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও অধিকাংশের চাকরি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে কাউকে কাউকে কলেজে সংযুক্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও বেশিরভাগ কলেজের প্রধান দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স।
সরকারি ৩৬টি নার্সিং কলেজের প্রত্যেকটির অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স, যারা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পদ পালন করছেন। উপাধ্যক্ষ পদে একজনও নেই। ৯০ শতাংশ নার্সের কোনো আবাসন সুবিধা নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারসহ নার্সিং পেশার বাইরের কর্মকর্তা। ফলে পেশাভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রমে নানামুখী সংকট তৈরি হচ্ছে।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন নার্সিং পেশার শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে আগের নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করেছে অধিদপ্তর। নার্সদের অভিযোগ, সরকার শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন