পুরনো প্রযুক্তির ঝুঁকিতে এফ-৭ : বিশ্বজুড়ে দুর্ঘটনার নজির

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ‘এফটি-৭ বিজিআই’ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত বিমানটি ছিল এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট হালকা যুদ্ধবিমান, যা তৈরি করে চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট করপোরেশন (সিএসি)। চীনে এই বিমান ‘জে-৭’ নামে পরিচিত হলেও রপ্তানির সময় একে ‘এফ-৭’ নামে বাজারজাত করা হয়।
১৯৬০ থেকে ১৯৯০ দশকের মধ্যে চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির বহরে অন্যতম দ্রুতগামী ও উচ্চতা অর্জনে সক্ষম জেট ছিল এই জে-৭। প্রযুক্তিনির্ভর ওয়েবসাইট এয়ারফোর্সটেকনোলজি ডটকম-এর তথ্য অনুযায়ী, এটির নকশা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিখ্যাত যুদ্ধবিমান এমআইজি-২১ এর অনুকরণে তৈরি।
নানা সংস্করণে রপ্তানি, বাংলাদেশে উন্নত মডেল
এভিয়েশনভিত্তিক ওয়েবসাইট এয়ারোস্পেস গ্লোবাল নিউজ জানায়, আমদানিকারক দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী এফ-৭ এর বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি করে চীনের কোম্পানিটি। যেমন, বাংলাদেশে আসা মডেলের নামের শেষে ‘বি’ ব্যবহৃত হয়, যা নির্দেশ করে আমদানিকারক দেশকে। ‘জি’ বোঝায় গ্লাস ককপিট এবং ‘আই’ বোঝায় ‘ইমপ্রুভড’ বা উন্নত সংস্করণ।
উন্নত সংস্করণে সাধারণত ডিজিটাল গ্লাস ককপিট, আধুনিক রাডার ও অ্যাভিওনিক্স প্রযুক্তি যুক্ত থাকে, যা বিমান চালনার সময় পাইলটকে বাড়তি সুবিধা দেয়।
দুর্ঘটনার হার তুলনামূলক বেশি
এফ-৭ যুদ্ধবিমান সারা বিশ্বেই বহুমুখী অভিযান, আকাশ প্রতিরক্ষা এবং প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে আধুনিক জেটের তুলনায় এর দুর্ঘটনার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন—পুরোনো নকশার এয়ারফ্রেম, সীমিত নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং আধুনিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির অভাব।
বাংলাদেশে ও বিশ্বজুড়ে এফ-৭ দুর্ঘটনা :
৮ এপ্রিল ২০০৮: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিধ্বস্ত হয় একটি এফ-৭। এতে নিহত হন স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান।
২৯ জুন ২০১৫: চট্টগ্রাম উপকূলে বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭এমবি মডেলের একটি জেট। নিখোঁজ হন পাইলট তাহমিদ রুম্মান।
২৩ নভেম্বর ২০১৮: টাঙ্গাইলের মধুপুরে প্রশিক্ষণের সময় এফ-৭বিজি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন পাইলট আরিফ আহমেদ।
বাংলাদেশের বাইরেও রয়েছে এফ-৭ এর ভয়াবহ দুর্ঘটনার নজির।
২০১৫ ও ২০২০ সালে, পাকিস্তানে দুই দফায় বিধ্বস্ত হয় এফ-৭। এতে প্রাণ হারান তিন পাইলট।
২৪ মে ২০২২, ইরানের ইসফাহানে বিধ্বস্ত হয় একটি এফ-৭; প্রাণ হারান দুই পাইলট।
স্বয়ংক্রিয়তার অভাব, পাইলটদের জন্য চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এফ-৭ একটি ‘low automation’ বা স্বল্প-স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান। এতে নেই আধুনিক ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম, উন্নত অ্যালার্ট সিস্টেম কিংবা প্রেডিক্টিভ ডিজিটাল সেফটি প্রযুক্তি। ফলে হঠাৎ করে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে পাইলটের হাতে খুব সীমিত সময় থাকে তা মোকাবিলার।
ফলে প্রশিক্ষণের সময় বিশেষত দ্রুতগতি ও কম উচ্চতায় ওড়ার সময় পাইলটদের সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হয়। সামান্য প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা মানবিক ভুলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন