সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা: ভিডিও ধারণ করাই কাল হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫, ৭:০১
সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা: ভিডিও ধারণ করাই কাল হলো

আসাদুজ্জামান তুহিন

গাজীপুরে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তির ওপর হামলা ও কোপানোর ঘটনা ভিডিও ধারণ করায় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা—এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) রবিউল ইসলাম জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের ঈদগাহ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তুহিন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চান্দনায় ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানিতে প্রতিনিধির কাজ করতেন।

ঘটনার বিবরণ

নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম জানান, সেদিন রাতে তুহিন বাসার পথে ছিলেন। হঠাৎ ৬–৭ জন যুবক দা ও চাপাতি নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি স্থানীয় চা দোকানি খায়রুল ইসলামের দোকানে আশ্রয় নেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা সেখানেই বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়, ফলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আশপাশে বহু লোক থাকলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।

ঘটনার সময় তুহিনের সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু দৈনিক নবচেতনা পত্রিকার মহানগর প্রতিনিধি শামীম হোসেন। তিনি জানান, একজন নারী ও বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ হচ্ছিল। বাদশা মিয়া ওই নারীকে আঘাত করলে কয়েকজন দুর্বৃত্ত নারীর পক্ষ নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাদশা মিয়াকে আক্রমণ করে। বাদশা মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যান।

তুহিন তখন পাশ থেকে মোবাইলে ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন। দুর্বৃত্তরা বিষয়টি দেখে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

পুলিশের তদন্ত

ডিসি রবিউল ইসলাম বলেন, “সিসিটিভি ও প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য অনুযায়ী, হত্যার সূত্রপাত ওই নারীঘটিত বিবাদের ভিডিও ধারণে। এটি চাঁদাবাজির ঘটনা নয়।” পুলিশের তথ্যমতে, সংশ্লিষ্ট নারী একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য, যারা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে পরে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে লুটপাট করে।

বাদশা মিয়া বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বাড়ি শেরপুরে এবং তিনি স্থানীয় রোজ সোয়েটার কারখানার কর্মী।

অন্যান্য তথ্য

পুলিশ জানিয়েছে, তুহিনের ফেসবুক প্রোফাইলে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো ভিডিও বা লাইভ পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি “যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য” শিরোনামে এক মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন, এছাড়া আরও দুটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।

বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ফুটেজ ও অন্যান্য ক্লু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো বিশ্লেষণ করে হত্যার পেছনের কারণ ও জড়িতদের শনাক্তের কাজ চলছে।

গাজীপুরে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা