ডিএনসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সই করা চেক আত্মসাতের অভিযোগ, তদন্তে ঢিলেঢালা তৎপরতা

২৩ জুন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ছবি দিয়েছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
গাজীপুরের টঙ্গীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে আসামির বাসা থেকে চেক বইসহ বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে এলেও তা জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মারফিয়া আফরোজসহ চার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
পাশাপাশি ঢাকার গেন্ডারিয়া কার্যালয়ে মারফিয়ার অফিসকক্ষও সিলগালা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ২২ জুন টঙ্গী সরকারি কলেজ এলাকা থেকে ইয়াবাসহ রমিজ উদ্দিন (৪৩) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে মারফিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি টিম। পরে দুপুরে তাকে নিয়ে দক্ষিণ খাঁপাড়ায় ভাড়া বাসায় যায় তারা। তবে মামলার এজাহারে বলা হয়, রমিজকে বাসা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৫ হাজার ইয়াবা। মামলার বাদী মারফিয়া আফরোজ নিজেই।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অভিযানে গিয়ে রমিজ উদ্দিনের স্বাক্ষরিত চেক বই জব্দ করেন মারফিয়া আফরোজ। তবে তা জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে অভিযোগ যায় ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে। অভিযোগের ভিত্তিতে অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) বশির আহমেদ ও অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ বদরুদ্দীন তদন্ত শুরু করেন।
তদন্তের অংশ হিসেবে তারা মঙ্গলবার গেন্ডারিয়া অফিসে গিয়ে সহকারী পরিচালক মারফিয়ার কক্ষ সিলগালা করেন।
পরদিন বুধবার ফের তদন্তে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মারফিয়া এবং তাকে দয়াগঞ্জের আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে তার অফিস কক্ষের তালা ভেঙে তল্লাশি চালিয়ে চেক বইসহ বেশ কিছু আলামত জব্দ করা হয়। দিন শেষে ফের অফিস কক্ষটি সিলগালা করা হয়।
এ ঘটনার জেরে মারফিয়া আফরোজ, এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস, এএসআই আতাউল হক ও কনস্টেবল সোহেল রানাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, চেক বইটি মারফিয়া নিজে দেখেননি। তিনি বলেন, বাসায় অভিযানের সময় কিছু ডকুমেন্ট আনি। সেগুলো সিপাই সোহেল রানা খুলে দেখে বলে একটা চেক বই আছে। আমি তাকে বলি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দিতে, কিন্তু সে আমার ড্রয়ারে রেখে দেয়। পরে ছুটিতে থাকাকালীন জানতে পারি আমার অফিস সিলগালা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চেকের কোনো অপব্যবহার হয়নি, এমনকি লেনদেনও হয়নি। কললিস্টে সিডিআর সংগ্রহ ছাড়া কিছুই নেই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তনের (ডিএনসি) এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, যিনি তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন, জানান—সহকারী পরিচালক মারফিয়া আফরোজসহ অভিযুক্ত চার কর্মকর্তাকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে একটি প্রভাবশালী মহল তদন্তে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। তিনি জানান, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তার নাম প্রকাশে তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, কোনো কর্মকর্তার ব্যক্তিগত অনিয়ম বা অপরাধের দায়ভার অধিদপ্তর নেবে না। প্রমাণ পেলে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে এসআই জান্নাতুল ফেরদৌসের পরিবর্তে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিদর্শক লোকমান হোসেনকে। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে ডিএনসি।
আপনার মতামত লিখুন