বিয়ের মাত্র এক বছর পরই পাইলট তৌকিরের মর্মান্তিক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ২১ জুলাই, ২০২৫, ২:৪১
বিয়ের মাত্র এক বছর পরই পাইলট তৌকিরের মর্মান্তিক মৃত্যু

ঢাকার দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যু সংবাদে রাজশাহীজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মাত্র এক বছর আগে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। স্ত্রী বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

সোমবার (২১ জুলাই) বিকালে রাজশাহীর উপ-শহর এলাকার সপুরার ‘আশ্রয়’ ভবনে গেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তৌকিরের স্বজনরা। জানান, দুপুরে বিমান দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা উচ্ছ্বসিত ছিলেন, কারণ এই প্রথম তৌকির একা প্রশিক্ষণ বিমান চালাচ্ছিলেন।

তৌকির ইসলামের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে হলেও পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীতেই বসবাস করছে। তার বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, বোন সৃষ্টি এবং বোনজামাই সপুরার বাসায় থাকেন।

শিক্ষাজীবনে তৌকির রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। এরপর সেখান থেকেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যুক্ত হন তিনি।

আইএসপিআর জানিয়েছে, দুর্ঘটনার দিন সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলার এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে উড্ডয়ন করে এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি। তবে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।

আইএসপিআর আরও জানায়, বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম দুর্ঘটনা থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যুদ্ধবিমানটি জনবহুল এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হন, প্রাণ হারান তিনি নিজে এবং সঙ্গে আরও ১৮ জন। আহত হয়েছেন ১৬০ জনের বেশি।

দুর্ঘটনার খবর শুনে রাজশাহীতে তৌকিরের বাসায় ছুটে আসেন আত্মীয়-স্বজন। স্বজনদের সঙ্গে সাংবাদিকরাও উপস্থিত হন।

তৌকিরের রাজশাহীর বাসার মালিক আতিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা প্রথমে ভেবেছিলেন তৌকির আহত অবস্থায় সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। তারা বিমানে করে ঢাকা যেতে চাইলেই বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে র‌্যাবের একটি মাইক্রোবাসে করে তাদের শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

আতিকুল আরও বলেন, তৌকিরের বাবা-মা, বোন ও বোনজামাই ঢাকা রওনা হওয়ার সময়ও জানতেন না তিনি মারা গেছেন। তারা তখনও আশায় বুক বেঁধে ছিলেন, ছেলে হয়তো বেঁচে আছে, সুস্থ হয়ে ফিরবে।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিমান বাহিনী একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।