ইরানের নিউক্লিয়ার কর্মসূচি ফের ঘুরে দাঁড়াবে, পেন্টাগনের গোপন রিপোর্ট

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ২৫ জুন, ২০২৫, ৫:১২
ইরানের নিউক্লিয়ার কর্মসূচি ফের ঘুরে দাঁড়াবে, পেন্টাগনের গোপন রিপোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি এমন তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)-এর গোপন এক বিশ্লেষণে। বুধবার (২৫ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আঘাতে সেটি শুধু ৬ থেকে ৯ মাসের জন্য বিলম্বিত হতে পারে, ধ্বংস নয়।

গত সপ্তাহে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা নিক্ষেপ করে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু পেন্টাগনের গোপনীয় বিশ্লেষণ উল্টো চিত্র তুলে ধরে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের মাটির নিচে থাকা গবেষণা ল্যাব ও সেন্ট্রিফিউজ ইউনিটগুলো আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অনেক স্থাপনাই পুনরায় সচল করার মতো অবস্থায় রয়েছে। আর এই হামলার আগে ইরান অধিকাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলেছিল বলে ক্ষতির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এ বিষয়ে বলেন, আমরা জানি না, ইরানের সংরক্ষিত ইউরেনিয়াম বর্তমানে কোথায় আছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে সেটা জানার চেষ্টা চলবে। এদিকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) প্রধান রাফায়েল গ্রসি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো হিসাব রাখতে পারছি না।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ হামলাকে সফল আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, স্থাপনাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে।

কিন্তু জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের প্রধান জেনারেল ড্যান কেইন কিছুটা সতর্ক মন্তব্য করেন: তিনটি কেন্দ্রই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এমন দাবি এখনই করা যাচ্ছে না। আমরা এখনো চূড়ান্ত মূল্যায়নের অপেক্ষায় আছি।

ডিআইএর এই প্রতিবেদন ফাঁস হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, এই তথাকথিত প্রতিবেদন ফাঁস করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমাদের সাহসী পাইলটদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে। হোয়াইট হাউস এখনো এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি, তবে কংগ্রেসে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

কয়েকজন ডেমোক্র্যাট সিনেটর প্রশ্ন তুলেছেন, কোটি কোটি ডলার খরচ করে যদি কেবল সময় কেনা হয়, তবে এটি কৌশলগত ব্যর্থতা নয় কি?

অন্যদিকে, ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমরা ভয় পাইনি। যত দ্রুত সম্ভব পারমাণবিক প্রকল্প আবার চালু করা হবে। ইরানি কর্মকর্তারা একে রাজনৈতিক শো বলেও অভিহিত করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক পদক্ষেপ মূলত একটি কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা। তারা বলছেন, ইরান চাইলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার আগের পারমাণবিক সক্ষমতায় ফিরে যেতে পারে। এই হামলা হয়তো তেহরানের পরিকল্পনাকে সাময়িকভাবে ব্যাহত করেছে, কিন্তু থামিয়ে দিতে পারেনি।