নব্বইয়ের ঘ্রাণ মাখা আধুনিক ‘উৎসব’

মাহিদুল অনিক :
প্রকাশ: ২৭ জুন, ২০২৫, ৫:৪৮
নব্বইয়ের ঘ্রাণ মাখা আধুনিক ‘উৎসব’

‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’ এই বাক্যটিকে স্লোগান করে প্রচারে নামা উৎসব সিনেমাটি এখন হয়ে উঠেছে এক অন্যরকম উদাহরণ। এই সময়ে, যখন বহু নির্মাতা পারিবারিক গল্পকে সরিয়ে দিয়ে থ্রিলার, অ্যাকশন কিংবা হিংসাত্মক সমসাময়িকতায় ঝুঁকছেন, তখন উৎসব এমন এক সাহসী বিপরীতমুখিতা যেখানে ঘর, প্রিয়জন আর পুরোনো দিনের ঘ্রাণ লেপ্টে থাকা গল্প দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের ‘শান্তি নীড়’-এ শুরু হয় গল্প, এক চাঁদরাতে। পাড়া-প্রতিবেশীর মিলনমেলায় মোবারক সাহেবের মৃত্যুতে যে শোক নামে, তা বদলে দেয় পুরো গল্পপটভূমি। তাঁর ভাই জাহাঙ্গীর, যিনি কৃপণ স্বভাবের জন্য এলাকায় ‘খাইস্টা জাহাঙ্গীর’ নামে পরিচিত, হঠাৎই সামনে দাঁড়ান নিজের জীবনের মুখোমুখি। এক রাতের ঝড়ে আসে মোবারকের আত্মা, আর সঙ্গে করে আনে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মুখোমুখি হওয়ার পালা।

তিনটি ভূতের রূপে হাজির হন চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান ও অপি করিম। তারা নিয়ে যান জাহাঙ্গীরকে এমন এক ভ্রমণে, যেখানে পরিবার, ভালোবাসা, অনুশোচনা ও সংশোধনের আবহ ছুঁয়ে যায় দর্শককেও। হাসির মোড়কে সাঁঝবাতির মতো জ্বলতে থাকা কান্না, আর কান্নার নিচে চাপা পড়ে থাকা হাসির মুহূর্ত এই দুইয়ের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে এক ব্যতিক্রমী ট্র্যাজিক-কমেডি।

চিত্রনাট্যে রয়েছে নিখুঁত সংবেদনশীলতা আর পরিমিত সংলাপ। হঠাৎ হঠাৎ দর্শক যখন গভীরে ডুবে যাচ্ছেন, তখনই হাসির এক ঝলক এনে ভারসাম্য রেখেছেন নির্মাতা।

সিনেমাটির আরও একটি বড় সম্পদ এর সময়চিত্র। নব্বইয়ের দশকের বাস্তবতা, স্মৃতি আর সংস্কৃতিকে পর্দায় এঁকেছেন রাশেদ জামানের ক্যামেরা হান্ড্রেড মোটরবাইক, ভিডিও ক্যাসেট, বিহারিদের বাস্তবতা, আর সেই সময়ের সিনেমা-গান সবই যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে আর্টসেল আর লেভেল ফাইভ-এর গান সিনেমার আবেগ আরও গভীর করে।

তারিক আনাম খান, আফসানা মিমি, ইন্তেখাব দিনার, অপি করিম, জয়া আহসান থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্মের সাদিয়া আয়মান, সুনেহরা সবার অভিনয়ই ছিল বিশ্বাসযোগ্য।

তবে সব ছাপিয়ে গেছেন জাহিদ হাসান। তাঁর অভিনয়ে এমন স্বতঃস্ফূর্ততা ও আবেগ ছিল, যা চরিত্রটিকে বাস্তব করে তুলেছে।

‘উৎসব’ এমন এক সিনেমা, যা মনে করিয়ে দেয় আমরা আসলে কেউই নিজের জীবনের প্রধান চরিত্র নই। সবাই সবার জীবনে পার্শ্বচরিত্র। তাই পরিবার ছাড়া কোনো উৎসবও পরিপূর্ণ নয়। জীবনের উৎসবও হয়ত সেখানেই, যেখানে কাছে থাকে প্রিয়জন, মিশে থাকে অতীত আর অনুশোচনার দীর্ঘশ্বাস।