লর্ডসে লেখা স্বপ্নপূরণের গল্প : টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা

দীর্ঘ ২৭ বছরের অপেক্ষা শেষে আইসিসি ট্রফির স্বাদ পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে অনুষ্ঠিত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৫ এর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বসেরা হলো প্রোটিয়ারা।

২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার নায়ক ছিলেন ওপেনার এইডেন মার্করাম। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৭ বলে ১৩৬ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন তিনি। মাত্র ৬ রান দূরে থাকতেই বিদায় নেন, কিন্তু ততক্ষণে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের দোরগোড়ায়।

চতুর্থ দিনের শুরুতেই বাভুমার বিদায়ে কিছুটা ধাক্কা খেলেও জয় নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তৃতীয় দিনে বাভুমা ও মার্করামের গড়া ১৪৭ রানের জুটি আসলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগা সত্ত্বেও বাভুমার ৬৬ রানের ইনিংস ছিল প্রশংসনীয়।

শেষ দিকে স্টাবস (২০), বেডিংহ্যাম ও কাইল ভেরেইনারের ছোট ছোট অবদান দক্ষিণ আফ্রিকাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। স্কোর যখন সমান, তখন স্টার্কের বলে ভেরেইনার কট বিহাইন্ড হলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি—অস্ট্রেলিয়ার ছিল না কোনো রিভিউ। পরের বলেই কাভারে ঠেলে কাঙ্ক্ষিত রানটি নিয়ে দীর্ঘ খরা কাটানোর উল্লাসে ফেটে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ড্রেসিংরুম।

প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানের লিড পেয়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ধরে রাখতে পারেনি গত চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। রাবাদা ও ইয়ানসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারায় তারা। স্মিথ ও ওয়েবস্টারের ফিফটিতে পৌঁছায় ২১২-তে। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৮ রানেই গুটিয়ে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আবার রাবাদার দাপট—অস্ট্রেলিয়া পড়ে বিপাকে। স্টার্কের ৫৮ রানে তারা দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ করে ২০৭, ফলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮২।

চতুর্থ ইনিংসে, লর্ডসের পিচ ব্যাটিং সহায়ক হলেও ফাইনালে এই রান তাড়া করা সহজ ছিল না। তবে আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য ও দৃঢ়তায় সেটাই করে দেখালেন মার্করামরা।

এই জয়ে ১৯৯৮ সালের আইসিসি নকআউট ট্রফির পর প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক ট্রফি ঘরে তুলল দক্ষিণ আফ্রিকা। গত বছর ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের হতাশা ভুলিয়ে তারা এবার পূর্ণ করল বহুপ্রতীক্ষিত স্বপ্ন।

২০২৫ সালে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে অপূর্ণতা কাটানোর যাত্রায় নিজেদের নাম লিখিয়ে ইতিহাসে নতুন পৃষ্ঠা যোগ করল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল।