ইউনূসের সাক্ষাৎ চান ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ৮ জুন, ২০২৫, ১০:০৭
ইউনূসের সাক্ষাৎ চান ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক

যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইউনূসের লন্ডন সফরকালীন সময়েই এ সাক্ষাৎ করতে চান এবং এ জন্য অনুরোধ করে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন—রবিবার (৮ জুন) ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, তা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে গঠিত এবং একটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার অংশ’।

তিনি জানান, দুদকের দাবি অনুযায়ী তিনি ও তাঁর মা বাংলাদেশে ৭,২০০ বর্গফুটের একটি জমি ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে’ গ্রহণ করেছেন—এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন টিউলিপ। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশে আমার বা আমার পরিবারের কোনো আর্থিক স্বার্থ নেই। আমি কখনও এমন কোনো জমির মালিক ছিলাম না।”

চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আপনার (ড. ইউনূসের) সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ হলে আমি আমার খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে পারব।”

টিউলিপ বলেন, “আমি লন্ডনে জন্মেছি, যুক্তরাজ্যের নাগরিক, এবং হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্লামেন্টে দায়িত্ব পালন করছি। বাংলাদেশ আমার হৃদয়ের কাছে হলেও, সেখানেই আমার জীবন গড়ে ওঠেনি।”

তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ঢাকার একটি এলোমেলো ঠিকানায় নোটিশ পাঠিয়ে চলেছে এবং গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে তথ্য ফাঁস করছে। “প্রতিটি পদক্ষেপ আগে মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে, অথচ আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কেউ কথা বলছেন না,” বলেন টিউলিপ।

তাঁর দাবি, তিনি বাংলাদেশের কোনো আদালত থেকে হাজিরার নোটিশ বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে জানেন না। তবুও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসব নিয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।

এদিকে, টিউলিপের খালা ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অনুপস্থিত অবস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছে।

টিউলিপ এইসব অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ছড়ানো অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বিতর্ক যাতে ব্রিটেনের সরকার ও সংসদীয় কার্যক্রমে প্রভাব না ফেলে, সেই কারণে তিনি স্বেচ্ছায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।

উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি নিজ থেকেই ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীদের আচরণবিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে তদন্তের অনুরোধ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে টিউলিপকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। রিপোর্টে তাঁর সম্পদের উৎসে কোনো অসংগতি পাওয়া যায়নি, তবে পারিবারিক সংযোগের কারণে সৃষ্ট ভাবমূর্তিগত ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল।

২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে মস্কো সফরে টিউলিপের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তবে তিনি জানান, এটি ছিল তাঁর ব্যক্তিগত পর্যটন ভ্রমণ এবং কোনো আনুষ্ঠানিক দায়িত্বে তিনি ছিলেন না।

এছাড়া, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি লন্ডনের প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের কিছু বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে, যেগুলোর মালিকানা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূস আগামী ৯ জুন লন্ডনে সফর করবেন। সফরে তিনি রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে ‘কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ গ্রহণ করবেন। এছাড়া, থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে তার।