যমুনায় ডাক বিএনপির, আস্থার সংকট কাটবে তো?

মনিরুল ইসলাম :
প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২৫, ১১:১০
যমুনায় ডাক বিএনপির, আস্থার সংকট কাটবে তো?

রাজনীতির উত্তপ্ত প্রেক্ষাপটে আগামী ২ জুন বিএনপিকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ ঘটনাকে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। এটি কি বিরোধী দলকে শান্ত রাখার উদ্যোগ, না কি আলোচনার মোড়কে সময়ক্ষেপণের নতুন কৌশল?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে আক্ষেপ করেছেন যে, আলোচনার আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। এতে বোঝা যায়, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শিবির প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানকে আস্থার জায়গা থেকে দেখছে না। বরং তাদের বক্তব্য, এটি কেবলমাত্র পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার এক প্রকার নাটকীয় আয়োজন।

সম্প্রতি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেও তা থেকে কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা বেরিয়ে আসেনি। বরং এই বৈঠকগুলোকেও রাজনৈতিক অচলাবস্থার আরেকটি চক্র বলে মনে করছেন বিরোধীরা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ চাপের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলের চাপও রয়েছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য। প্রধান উপদেষ্টা একদিকে বিদেশি অনুদান ও কূটনৈতিক সমর্থন ধরে রাখতে চাইছেন, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টায় আলোচনার খোলস বজায় রাখছেন। কিন্তু এতে যদি কার্যকর সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

সরকারবিরোধী পক্ষ ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চায় এবং বারবার বলছে—‘সংস্কারের নামে কলা ঝুলানো’ এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মনে করছে, এই আমন্ত্রণ একটি সময়ক্ষেপণের চেষ্টা, যাতে রাজপথের আন্দোলনকে দুর্বল করা যায়। অপরদিকে সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন কাঠামোর অভ্যন্তরে থাকা ক্ষমতাধর গোষ্ঠীগুলো আলোচনার মাধ্যমে বাস্তব ছাড় দিতে প্রস্তুত কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২ জুনের বৈঠক হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে সরকার কার্যকর রূপরেখা উপস্থাপন করলে আলোচনার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। অন্যথায় এটি আরও একটি ‘দৃশ্যমান আলোচনার’ পর্দা হয়ে থেকে যাবে। রাজনীতির ভাষায় যা হয়তো পরিস্থিতি সাময়িক নিয়ন্ত্রণে আনবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দ্বার খুলবে না।

এই অবস্থায় রাজপথেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে বিরোধী দলগুলো এগিয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিচক্ষণতা ও সময়োচিত সিদ্ধান্তই হয়তো ঠিক করে দেবে—বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোন পথে হাঁটবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একইদিন জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।