সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু

টানা বৃষ্টির ফলে সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে বসতঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার ৭ নম্বর লক্ষ্মণাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ার ঘাট গ্রামে শনিবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে সোয়া ২টার মধ্যে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—রিয়াজ উদ্দিন (৫০), তার স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৪), মেয়ে সামিয়া খাতুন (১৫) ও ছেলে আব্বাস উদ্দিন (১৩)।
রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের চার ঘণ্টার যৌথ অভিযানে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গোলাপগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল মাহমুদ ফুয়াদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “নিহতদের পরিবার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুরোধ করেছেন। এটি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সেই বিবেচনায় আইনানুগ বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে।” নিহতদের জানাজা বাদ আসর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রিয়াজ উদ্দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসতঘরের একটি কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত দেড়টার দিকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে টিলার পাদদেশে থাকা আধাপাকা ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়ে। মুহূর্তেই তারা মাটিচাপায় নিখোঁজ হন। স্থানীয়দের উদ্ধারচেষ্টা ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়। রাত ৪টার পর উদ্ধার অভিযান শুরু হয় এবং ভোরের পর মরদেহগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
ইউএনও আরও জানান, টানা বৃষ্টির কারণে এলাকার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি রাখালগঞ্জ বাজারে বড় একটি গাছ রাস্তায় পড়ে থাকায় ফায়ার সার্ভিসের সময়মতো পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। একই ইউনিয়নের আরও দুটি স্থানে টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে, তবে সেখানে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই দিন ধরে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিটি মসজিদেও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, “ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। গোলাপগঞ্জে তিনটি জায়গায় টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে। একটিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, বাকি দুটি জায়গায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে, তবে এখনো বিপৎসীমার নিচেই রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “বন্যা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। ৫৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, শুকনো খাবার ও গো-খাদ্যের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। গোলাপগঞ্জ ছাড়া অন্য কোনো এলাকা থেকে এখনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।”
আপনার মতামত লিখুন