সেনা অভিযানে গ্রেফতার শীর্ষ সন্ত্রাসী এক্সেল বাবু

ছবি - আইএসপিআর
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশন এলাকায় আজ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর বসিলা ক্যাম্প থেকে বের হওয়া একটি বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ফরিদ আহমেদ বাবু ওরফে এক্সেল বাবু (৫৬) সহ আরও তিনজনকে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এ অভিযানে অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট।
এক্সেল বাবুর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগে ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যমতে, তিনি রাজধানীতে সক্রিয় কিশোর গ্যাং ‘টিন এজ টর্নেডো’, ‘ডার্ক স্ট্রাইকার্স’ এবং ‘রেড ভলক্যানো’র গডফাদার। এছাড়া দুর্ধর্ষ অপরাধী ‘কব্জিকাটা আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার’ এর পেছনেও এক্সেল বাবুর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলে গোয়েন্দারা জানায়।
এক্সেল বাবুর গ্যাং চক্র রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বসিলা, আদাবর, শ্যামলী, হাজারীবাগ ও আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, অস্ত্রের মহড়া, কিশোরদের জড়িত করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির কাজে লিপ্ত ছিল দীর্ঘদিন ধরে। ভুক্তভোগীদের অনেকে তার ভয়ে মুখ খোলেননি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বড় গ্যাং সংঘাতের পর সেনা গোয়েন্দারা সরাসরি মাঠে নামে।
সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এক্সেল বাবুর চলাফেরা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে নজরদারি চলছিল। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, অবস্থান ও যোগাযোগের ধরন পর্যবেক্ষণ করেই আজকের অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের বর্তমানে নিরাপদ স্থানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর অন্যান্য গ্যাং নেটওয়ার্কের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী ও গ্যাং সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম নির্মূল করতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য স্থানীয় সেনা ক্যাম্প অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট জানাতে সকল নাগরিককে আহ্বান জানানো হয়েছে। সেনা কর্মকর্তারা আরও জানান, এই অভিযানের মাধ্যমে শুধু এক্সেল বাবু নয়, তার মাধ্যমে পরিচালিত পুরো গ্যাং সিন্ডিকেটের কার্যক্রম ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে এক্সেল বাবুর গোপন পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বলে ধারণা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। তার বিলাসবহুল জীবনযাপন ও প্রভাব বিস্তারের পেছনে কে বা কারা ছিল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বসিলার কিছু সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে অনুসন্ধানকারী সংস্থা। গ্রেফতারের পর সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করলেও অনেকে বলছেন, শুধু বাবুকে আটকে পুরো গ্যাং দমন সম্ভব নয়। যারা তাকে ছায়া দিচ্ছিল, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এক্সেল বাবুর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকটি অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা। এটি সফল হলে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং ও মাদক সিন্ডিকেটের ওপর বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন