তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ভুয়া ডিগ্রি ও মাকে ঘরছাড়া করার অভিযোগ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের পিএইচডি ডিগ্রি ভুয়া বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস। রোববার (৪ মে) আপিল বিভাগে একটি বাড়ি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে আদালতে এ তথ্য দাখিল করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার। দীর্ঘদিন ধরে তুরিন নিজেকে ‘ডক্টর’ পরিচয়ে পরিচিত করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাফ জানানো বক্তব্য অনুযায়ী তিনি কোনো পিএইচডি সম্পন্ন করেননি।
মামলার শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক আদালতকে জানান, প্রসিকিউটর থাকা অবস্থায় তুরিন আফরোজ নিজের ক্ষমতা অপব্যবহার করে তার মাকে উত্তরার বাড়ি থেকে বের করে দেন।
তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার মা শামসুন্নাহার বেগমকে বাড়ি থেকে এক মুহূর্তে বের করে দেওয়া হয়, যা মানবিকভাবে মর্মান্তিক।
তিনি মায়ের পক্ষে বাড়িতে থাকার নির্দেশনার আবেদন জানান।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, রাজধানীর উত্তরার রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর প্লটের ওই বাড়িতে ২০০২ সাল থেকে তুরিন আফরোজের মা শামসুন্নাহার বেগম এবং ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ বসবাস করে আসছিলেন। তবে ২০১৭ সালে তুরিন আফরোজ তাদের সেখান থেকে বের করে দিলে শুরু হয় পারিবারিক মালিকানা ও ভোগদখল নিয়ে আইনি বিরোধ।
তুরিন আফরোজের দাবি, তার বাবা তসলিম উদ্দিন ১৯৯৪ সালে তাকে ওই সম্পত্তি হেবা করেন। অন্যদিকে তার মা ও ভাইয়ের দাবি, ১৯৯৭ সালে শামসুন্নাহার নিজেই সম্পত্তিটি ছেলে শাহনেওয়াজকে হেবা দেন এবং পরে তার নামে নামজারি করে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ওই বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
উভয় পক্ষের মামলা ও পাল্টা মামলার পর ২০১৮ সালে ঢাকার পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ওই বাড়ির ভোগদখলের ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে রুল শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. সেলিমের একক বেঞ্চ ওই স্থিতাবস্থা বাতিল করেন।
এতে করে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজের বসবাসের ক্ষেত্রে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানান আইনজীবীরা।
তুরিন আফরোজের ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি ও পারিবারিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ একত্রে সামনে আসায় এটি শুধু একটি পারিবারিক মামলা নয়, বরং একজন সাবেক রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা হিসেবে তার নৈতিকতা ও যোগ্যতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
বিষয়টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের মামলাতেও রূপ নিতে পারে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন