বিবিসি ফরেনসিকে প্রমাণিত: শেখ হাসিনার গোপন ফোনালাপে প্রাণঘাতী নির্দেশ

শেখ হাসিনা, ফাইল ছবি।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময় সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি আই। তাদের অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপের অডিও রেকর্ডিং যাচাই করে এই দাবি করা হয়েছে। বিবিসি বলছে, এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ যে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ওই দমন-পীড়নের অনুমতি দিয়েছিলেন।
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপে তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ এবং ‘যেখানেই আন্দোলনকারীদের পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি চালাতে’ নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ফোনালাপটি তিনি ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই, ঢাকার গণভবন থেকে সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে করেন বলে জানায় বিবিসি। ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীজুড়ে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাইফেল দিয়ে হামলা চালানো হয়।
অডিওটি রেকর্ড করে বাংলাদেশের জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। মার্চ মাসে এটি অনলাইনে ফাঁস হয়। অডিওটি কে ফাঁস করেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা ব্রিটেনভিত্তিক অডিও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ‘ইয়ারশট’-এর সহায়তায় রেকর্ডিংটির সত্যতা যাচাই করেছে। তাদের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংয়ে কোনো ধরনের এডিটিং, বিকৃতি বা কৃত্রিম রূপান্তরের প্রমাণ পাননি। বরং অডিওর শব্দতরঙ্গ, স্বর, ছন্দ ও শ্বাস-প্রশ্বাস বিশ্লেষণ করে এটিকে ‘প্রামাণ্য ও গ্রহণযোগ্য’ হিসেবে অভিহিত করেন তারা।
ইয়ারশট জানায়, রেকর্ডিংটি এমন ঘরে করা হয়েছিল, যেখানে ফোনালাপটি স্পিকারে চলছিল। এতে স্পষ্ট টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রেকর্ডিংজুড়ে ‘ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি (ENF)’ শনাক্ত করা হয়েছে যা এডিট না করা রেকর্ডিংয়ের বৈশিষ্ট্য।
বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিল পেয়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
মানবাধিকার আইনজীবী এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেন, রেকর্ডিংটি শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নির্ভরযোগ্য এবং অন্য প্রমাণের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ওই আন্দোলনে প্রায় ১,৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৫২ জন বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হন যা দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতার নজির।
তবে ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, টেপে কোনো অবৈধ উদ্দেশ্য বা অতিরিক্ত সহিংসতার নির্দেশ আছে বলে আমরা মনে করি না।
বিবিসির অনুসন্ধান বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন