শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ‘কলিজা খুলে ফেলার’ হুমকি দিলেন সাবেক বিএনপি সাংসদ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২৫, ৪:২৮
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে ‘কলিজা খুলে ফেলার’ হুমকি দিলেন সাবেক বিএনপি সাংসদ

সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির পদে নিজের নাম না থাকার খবরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুল আলমকে গালাগাল ও হুমকি দেন সাবেক এমপি ও উপজেলা বিএনপির সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া।

গত মে মাসের ওই ফোন কথোপকথনের প্রায় দুই মিনিটের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মঙ্গলবার ভাইরাল হয়।

অডিওতে শোনা যায়, গফুর ভূঁইয়া বোর্ড চেয়ারম্যানকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার পাশাপাশি তাকে অপমান এবং মামলা করার হুমকি দেন। তিনি বলেন, “আপনাকে এ চেয়ারে কে বসাইছে, তার কত বড় কলিজা? তার কলিজা খুলব, আপনার কলিজাও খুলব। আমি অফিসে এসে আপনাকে অপমান করব। আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। আপনাকে দেখে নেব।”

জানা গেছে, গত ১৭ মে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়, যাতে নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিতে আবদুল গফুর ভূঁইয়া, বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড় ভাই ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন এবং ইসরাত সুলতানা সুমীর নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল।

পরে বোর্ড তাদের মধ্যে ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ খবর পাওয়ার পরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে গফুর ভূঁইয়া পরদিন বোর্ড চেয়ারম্যানকে ফোনে গালাগাল ও হুমকি দেন। বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, বোর্ড চেয়ারম্যানের বিশেষ অনুরোধে ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেন এবং ২২ মে গফুর ভূঁইয়াকে সভাপতি হিসেবে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মহিন উদ্দিন বলেন, “সাবেক এমপি গফুর ভূঁইয়াকে সভাপতি না করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে তাকে সভাপতি করায় বিষয়টি সমাধান হয়েছে।”

অন্যদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার অভিযোগ করেন, গফুর ভূঁইয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রশাসনের লোকজনকে হেনস্তা ও হুমকি দেন এবং এলাকার আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করেন।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “এ বিষয়ে আর মন্তব্য করতে চাই না, বিষয়টি পাঠকরা যা বোঝার বুঝে নিন। সাবেক এমপি আমার অফিসেও এসেছিলেন।”

অডিও প্রসঙ্গে সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, “এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। অডিওটি এডিট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে চাই না,” এবং তার পর মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন বলেন, “অডিও ভাইরাল হওয়ায় এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না, তবে বিষয়টি দুঃখজনক।”

এ ঘটনাটি স্থানীয় রাজনৈতিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বিরোধ ও উত্তেজনার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।