কৃষিই সমৃদ্ধি স্লোগানে বেতাগীতে ফলমেলা ও কৃষি উপকরণ বিতরণ

‘কৃষিই সমৃদ্ধি’ এই প্রাণবন্ত স্লোগানকে বুকে ধারণ করে বরগুনার বেতাগীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উপজেলা ফলমেলা ২০২৫। এই মেলা উপলক্ষেই খরিপ মৌসুমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন ২০২৫) বেতাগী উপজেলা কৃষি অফিস চত্বর হয়ে উঠেছিল যেন এক কৃষি উৎসবের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে এই দুই আয়োজনের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়।
“দেশী ফল বেশী খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই” – এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামী ২১ জুন পর্যন্ত চলবে এই ফলমেলা। মেলায় শোভা পাচ্ছে নানা জাতের আকর্ষণীয় দেশীয় ফলের সমাহার এবং উন্নত মানের ফল গাছের চারা। আধুনিক ও লাভজনক ফল চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের হাতে-কলমে ধারণা দিতে বিভিন্ন প্রদর্শনী স্টল স্থাপন করা হয়েছে, যা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত তথ্যবহুল।
ফলমেলার বর্ণিল উদ্বোধনের পরপরই শুরু হয় বহু প্রতীক্ষিত কৃষি উপকরণ বিতরণ পর্ব। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের খরিপ মৌসুমে সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বেতাগী উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হয় উচ্চফলনশীল নারিকেল চারা, লেবু চারা, মরিচের বীজ এবং প্রয়োজনীয় সার।
এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ বশির গাজী এবং সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি অফিসার তানজিলা আহমেদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বেতাগী-এর আয়োজনে সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী কৃষি খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘ কৃষি আমাদের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ফলমেলা আয়োজনের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশীয় ফলের বৈচিত্র্য ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে চাই এবং জনগণকে ফল চাষে আগ্রহী করে তুলতে চাই। পাশাপাশি, খরিপ মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের হাতে বিনামূল্যে বীজ ও সার তুলে দেওয়ার এই উদ্যোগ সরকারি কৃষিবান্ধব নীতিরই প্রতিফলন। এর ফলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমবে এবং তারা ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবেন, যা তাদের জীবনমানের উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, কৃষি অফিসের এমন উদ্যোগ কৃষকদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক এবং বেতাগীর সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার তানজিলা আহমেদ বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় কৃষকদের পাশে থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে আসছে। এই ফলমেলা যেমন নতুন জাতের ফল এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা দেবে, তেমনি কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিতরণকৃত উপকরণগুলো কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে সরাসরি সাহায্য করবে। নারিকেল, লেবু ও মরিচের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলের বীজ ও চারা বিতরণের মাধ্যমে আমরা কৃষকদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করি, এই সমন্বিত প্রচেষ্টা বেতাগীতে কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে এবং ‘কৃষিই সমৃদ্ধি’ স্লোগানটি বাস্তবে রূপ লাভ করবে।’
বিনামূল্যে উন্নত জাতের চারা, বীজ ও সার হাতে পেয়ে সুবিধাভোগী কৃষকদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের ছাপ। তারা মাননীয় সরকার এবং কৃষি বিভাগের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, এই সময়োপযোগী সহযোগিতা তাদের ফসল উৎপাদনে নতুন প্রেরণা জোগাবে এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করবে।
তিন দিনব্যাপী এই ফলমেলা এবং বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কর্মসূচি বেতাগীর কৃষকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। সংশ্লিষ্ট সকলেই আশা করছেন, এই সমন্বিত উদ্যোগ বেতাগীর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, যা চূড়ান্তভাবে ‘কৃষিই সমৃদ্ধি’র পথকে প্রশস্ত করবে।
আপনার মতামত লিখুন