বেতাগীতে ঈদের আগমুহূর্তে অন্ধকারে ১০ হাজার পরিবার

জসিম উদ্দিন, বেতাগী(বরগুনা) প্রতিনিধি:
প্রকাশ: ৬ জুন, ২০২৫, ১২:০০
বেতাগীতে ঈদের আগমুহূর্তে অন্ধকারে ১০ হাজার পরিবার

 

বরগুনার উপকূলীয় জনপদ বেতাগীতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবের চার দিন পেরিয়ে গেলেও ফেরেনি বিদ্যুৎ। আলো জ্বলেনি উপজেলার অধিকাংশ ঘরে। পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন বেতাগী পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতায় থাকা প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঝড়ের দিন থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীরা।

পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানায়, বেতাগী উপজেলায় মোট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। গত ৩ জুন দুপুর ১টা ২৭ মিনিটে কালবৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে, তার ছিঁড়ে যায় এবং গাছপালা পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এখনো অনেক জায়গায় খুঁটি পড়ে আছে, গাছ চাপা পড়ে আছে বিদ্যুতের তারের ওপর। মেরামতের প্রতিশ্রুতি থাকলেও কাজ চলছে ধীরগতিতে—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

বেতাগী পৌরসভার ঢালীকান্দা, সদর ইউনিয়নের বাসন্ডা, দক্ষিণ বেতাগী, হোসনাবাদ ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি, বাসন্ডা ও কাটাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে জীবনযাত্রা। ঈদের আগ মুহূর্তে বিদ্যুৎহীনতায় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ঢালীকান্দা গ্রামের দোকানি আব্দুল জলিল সিকদার জানান, ফ্রিজে রাখা প্রায় ৫ হাজার টাকার আইসক্রিম, মাছ ও মাংস নষ্ট হয়ে গেছে, সব ফেলে দিতে হয়েছে। সামনে ঈদ, কোরবানির মাংস সংরক্ষণের চিন্তায় অস্থির তিনি।

বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন গৃহিণীরাও। বেতাগী সদর ইউনিয়নের রেমিজা আক্তার বলেন, ফ্রিজে রাখা গোশত নষ্ট হচ্ছে, ঈদের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে কোরবানির মাংস কোথায় রাখবেন, বুঝতে পারছেন না।

দিনমজুর, অটোরিকশা চালকদের জীবনও থমকে গেছে। ঢালীকান্দার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক রতন শীল জানান, চার দিন ধরে রিকশা চার্জ দিতে না পারায় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে, পরিবার নিয়ে বিপদে আছেন।

আগামী ২৬ জুন থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার পর মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়তে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। এতে পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা যাচ্ছে না বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।

বেতাগী পল্লীবিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ইনচার্জ প্রকৌশলী পাবেল দাবি করেন, সংযোগ চালুর জন্য টিম নিরলসভাবে কাজ করছে এবং খুব দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণেই দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

ঈদের ঠিক আগে এমন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বেতাগীর হাজারো মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ম্লান হয়ে যাচ্ছে ঈদের আনন্দ। বিদ্যুৎ কবে নাগাদ পুরোপুরি চালু হবে—তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।