দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রতারণা: চক্রের চারজন গ্রেপ্তার

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিচয় ও ছবি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের মহাপরিচালক বা উপপরিচালকের নাম ও ছবি ব্যবহার করে তারা দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। যদিও এর আগে দুদক একাধিকবার এ ধরনের প্রতারণা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল, তবু নতুন করে এটি আলোচনায় আসে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি কলরেকর্ডসহ পোস্ট দিলে। সেই পোস্ট ঘিরেই নড়েচড়ে বসে দুদক।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার (২৮ জুন) র্যাব ও পুলিশের সহযোগিতায় চার প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তারা হলেন—পিরোজপুরের বাদোলখালী গ্রামের মো. সেলিম, বাগেরহাটের মো. তরিকুল ইসলাম, ঢাকার মুগদার মো. আতিক এবং নোয়াখালীর মো. আব্দুল হাই সোহাগ। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল, ১৩টি সিমকার্ড, ব্যাংক চেক ও ভিজিটিং কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ জানান, ২৪ জুন এনসিপি নেতা হাসনাতের ফেসবুক পোস্টটি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দুদক। একই নম্বর থেকে এর আগেও অন্তত চারবার একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে রাজধানীর গুলশান ও রমনা থানায় দায়ের করা দুটি সাধারণ ডায়েরিও রয়েছে।
ভুক্তভোগী মিতুর অভিযোগে জানা যায়, দুদকের ডিজি আকতার হোসেন ও এক উপপরিচালকের পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করে প্রতারক চক্র। টাকা না দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে এনসিপি নেত্রী ডা. মিতু ও ভুক্তভোগী অন্যরা দুদকের দায় এড়ানোর প্রবণতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক আকতার হোসেন জানান, কমিশনের কোনো কর্মকর্তা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, “যারা প্রতারিত হয়েছেন, তারা জিডি করেছেন এবং আমরা তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছি। একই নম্বর থেকে একাধিকবার প্রতারণা হয়েছে, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। তবে দুদকের কেউ জড়িত থাকলে কোনো ছাড় নেই।”
একইসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে উপস্থাপনের অনুরোধ জানান, যাতে কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়। অন্যদিকে দুদকের আরেক মহাপরিচালক বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্ট দুদকের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। তাই প্রয়োজনে এরও বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।
দুদকের মতে, রেড ক্রিসেন্টে এক অভিযানের পর ধারণা করেছিলেন মিতু হয়তো কোনো অভিযোগের তালিকায় আছেন। কিন্তু অভিযানে তার নাম নেই বলেও দাবি করেছে কমিশন।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক বলছে, প্রতারণার এই চক্র অত্যন্ত পেশাদার এবং সংগঠিত। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন